Sunday, July 31, 2011

রিলেশনের শুরু



অনেকতো হলো...
প্রেমের প্রকার, রিলেশনের ঝগড়া, এমনকি ব্রেকআপও। কেননা এবার একদম গোড়াতে যাওয়া যাক, প্রেমের একদম শুরুটায়। যে শুরুটাকে ব্লগবন্দি করার চেয়ে দুষ্কর ও অসম্ভব কাজ কিছু হতে পারে বলে মনে হয় না। তবুও লেখক সাহস করছেন... আগের লেখাগুলো যে লেখকের দুঃসাহসকে চূড়ান্ত মাত্রা দিয়ে গেছে... :)

অনেক ভাবলাম লেখাটা কিভাবে সাজানো যায়। সময় অনুযায়ী সাজানো যেতো কিন্তু বোরিং লাগতো... প্রকারভেদ করে লাভ নেই... কোন ফরম্যাটেই আনা যাবে না। তাই ভাবলাম বিভিন্ন Aspect বা বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে লিখি।

১. মানসিক অবস্থা: আহ্! লেখার শুরুতেই শব্দের অভাব বোধ করছি। :) অভাব বোধ করারই কথা। কেননা রিলেশন নিয়ে ৩টা লেখার পরও, এই পর্যায়টা নিয়ে কথা বলতে গেলে সাহিত্যিক না হওয়ার কষ্টটা প্রবলভাবে অনুভব করি। :)

ছোট ছোট ভালোলাগা... ক্ষুদ্রাতি-ক্ষুদ্র ব্যাপারগুলো.. হীম ঠান্ডা বিকেলে ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া... বৃষ্টিতে রিকশায় পাশে বসে থাকা 'ও'-র চুল থেকে শেষ নির্যাসটুকু নেয়ার চেষ্টা... চুলের ফাঁক দিয়ে সূর্যের শেষ আলো দেখায়... ভালোবাসা...
বিরক্তিগুলোকে মনের খোরাকে পরিণত করে ভালোবাসার শুরুটা... মিলিয়ে আসা বডি-স্প্রের ঘ্রাণে পাগল ভালোবাসার শুরুটা... যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা নিজেদের দেখায় ক্লান্তি নেই... ছাতাহীন ঝুম বৃষ্টিতে ভেজায় আক্ষেপ নেই... পিচ্ছিল টাইলসে বারবার স্লাইড দিয়ে চলায় একঘেঁয়েমি নেই... "যা দেখি তাই লাগে ভালো..." আর মনে চাপা হাসি... যার কিঞ্চিৎ ঠোঁটেও খুঁজে পাওয়া যাবে... এতোটাই অদ্ভূত... এতোটাই স্বস্তির... এতোটাই অস্থির... এতোটাই আনন্দের ভালোবাসার প্রথমটা....

”আমার চোখে তো সকলই শোভন,
সকলই নবীন, সকলই বিমল,
সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন,
বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল— সকলই আমার মতো ।
তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়,
হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়—
না জানে বেদন, না জানে রোদন, না জানে সাধের যাতনা যত ।”
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সারাদিন এভাবে অর্থহীন বকবক করে যেতে পারি, কিন্তু তাও এই অনুভূতি কি-বোর্ডে আনার সামর্থ্য নেই। :)

একেকজনের কাছে এ অনুভূতিগুলো একেক রকম। ব্যক্তিগতভাবে, আমার কাছে ভালোবাসার শুরুটা ভোর-রাতে প্রচন্ড জ্বর ছেড়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফেরার আগের ’না ঠান্ডা, না গরম’ অনুভূতির মতো... :)

২. কিছু কথা: প্রায় সব রিলেশনের শুরুতেই কিছু গদবাঁধা কথাবার্তা খুবই স্বাভাবিক। এই কথাগুলো বলার বা জানার ইচ্ছে কাপলদের মধ্যে প্রবল।

● "আচ্ছা, তুমি কেন আমাকে প্রোপোজ করো নাই?"
● "আচ্ছা, তুমি আমার মধ্যে কি দেখেছিলা?
● "এতো মেয়ে থাকতে আমি কেন?"
● "আমি যখন তোমাকে প্রোপোজ করলাম, তখন তোমার কি মনে হয়েছিলো....?"
● "আমার সাথে সংসার করতে গেলে তোমার খবর হয়ে যাবে।"

মজার একটা ব্যাপার, যদিও আমরা ধরেই নেই যে, রিলেশন করা হয় (বা করাই হয়) আলটিমেটলি বিয়ের জন্য, খুব কম রিলেশনই 'একদিন দু'জনের বিয়ে হবে' - এই চিন্তা থেকে গড়ে ওঠে। রিলেশনের শুরুতে ভালোলাগা আর আবেগের ভূমিকাটাই মূখ্য... বাকি চিন্তাগুলো মাথায় আসে পরে। :)

রিলেশনে পরে গিয়ে সমস্যা হতে পারে এমন বিষয়গুলো নিয়ে ভাবনাও শুরু হয়ে যায়। এ চিন্তাগুলো কোন কারণে ছেলেদের মধ্যে তেমন একটা কাজ করে না, যতোটা মেয়েদের মধ্যে করে। ছেলেদের মধ্যে - "যখন আসবে, তখন দেখা যাবে...." এমন একটা মনোভাব দেখা যায়। :)

৩. আমাদের 'প্রথম': রিলেশনের শুরু থেকেই কোন কোন বিষয় নিজেদের রিলেশনের ক্ষেত্রে প্রথমবার ঘটলো, তার হিসেব রাখা শুরু হয়। মেয়েদেরকে এই হিসেবের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি সক্রিয় (এবং কার্যকর) ভূমিকায় দেখা যায়। :)

প্রথম দেখা, প্রথম Date, প্রথম হাত ধরা, প্রথম গাল টেপা, প্রথম Kiss, প্রথম রিকশা জার্নি, প্রথম বৃষ্টি ভেজা, প্রথম "Love You..." বলা, একসাথে প্রথম ভ্যালেন্টাইনস ডে... এমনই নানা সব 'প্রথম' -এর হিসেব রেখে থাকেন কাপলরা... ;)


৪. ডেটিং: প্রথম দিককার ডেটিংগুলো আর যেকোন সময়ের চেয়ে আলাদা।

● প্রাথমিকভাবে দু'জনের প্রথম দেখা ও পরের বেশ ক'বারের দেখায় কিছু লজ্জা এবং "করবো কি করবো না...." বা "করা উচিৎ হবে কিনা..." ব্যাপার কাজ করে। যতো দিন যায়, যতো রিলেশনের Intimacy (মানসিক ও শারীরিক) বাড়ে ততোই এটা স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে। এই বরফ গলাটায় একটা দারুণ Thrill আর মজা আছে। তবে খুব তাড়াতড়ি এই বরফটা না গলতে দেয়াই ভালো! :)
● প্রথম দিককার ডেটিং প্লেসগুলো হয় খুব সতর্কভাবে পছন্দ করা। এই এলাকায় মেয়ের আত্মীয়স্বজন বেশি, তো ঐ এলাকায় ছেলের বাসা - এসব চিন্তাও উঠে আসে ডেটিং প্লেস নির্ধারণের ক্ষেত্রে। B-)
● প্রথম দিকে ডেটিং প্লেসগুলো খুব ঘনঘন পরিবর্তিত হতে থাকে। পরে গিয়ে হাতে গোণা নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় পরিণত হয়। জায়গাগুলো এমন যেখানে কাপল খুব রিলাক্স ও চিরচেনা একটা পরিবেশ পান।
● প্রথম দিকের ডেটগুলো দু'জনের দুরন্ত সব পাগলামিতে ভরা থাকে, পরস্পরকে চমকে দেবার প্রচেষ্টা থাকে। 'ও' Expect করছে না, এমন একটা কিছু ঘটিয়ে দেবার ইচ্ছে সবসময় মনের ভেতর কাজ করে। :)

৫. বন্ধুকূল ও আপনজন: বন্ধুকূলে রিলেশনের একটা বিশাল প্রভাব পড়ে -

● যদি রিলেশন ফ্রেন্ড-সার্কেলের কারো সাথে হয়ে থাকে, তবে ভিন্ন কথা। কিন্তু এর বাইরের কেউ হলে এবং তাকে ফ্রেন্ডরা না চিনলে, কে সেই মেয়ে/ছেলে তা জানার প্রবল আগ্রহ ফ্রেন্ডদের মধ্যে গড়ে ওঠে।
● বন্ধুদের সাথে কথায় কথায় রিলেশনের প্রসঙ্গ তুলে আনা এবং 'ও'-কে নিয়ে কথা বলার দারুণ আগ্রহ দেখা যায়।
● আড্ডা থেকে উঠে এসে পৃথক হয়ে ফোন ধরাটা খুবই কমন।
"আমাদের রিলেশনটা না একদমই অন্যরকম... আমি তোকে বোঝাতে পারবো না..." অথবা "ও না একদমই অন্যরকম একটা ছেলে/মেয়ে...." - বন্ধুদের এমন কথা হরহামেশাই বলা হয়ে থাকে।

৬.ফোন-ফেইসবুকে প্রভাব: রিলেশন হওয়ার একদম ঠিক পর পর ফেইসবুকে আচার-আচরণে বিশেষ কিছু পরিবর্তন আসে -

● খুব ঘন ঘন রোমান্টিক স্ট্যাটাসের দেখা মেলে। নোট, স্ট্যাটাস বা ওয়ালপোস্ট আকারে রোমান্টিক গানের দেখা মেলে। জীবনেও রবীন্দ্রনাথের গান শোনে না এমন ছেলের ওয়ালেও কবিগুরুর দেখা মিলে যেতে পারে।
● রিলেশনের একদম ঠিক পরপরই অতি উৎসাহীরা Relationship Status পরিবর্তন করে ফেলেন। যাদের কাউকে বলতে/জানাতে সমস্যা নেই তারা কার সাথে রিলেশন সেটাও জানিয়ে দেন।
● মাঝে মাঝে স্ট্যাটাসে/ওয়াল পোস্টে এমন কিছু 'সাংকেতিক শব্দ' দেখা যাবে যা ঐ কাপল চ্যাটে বা সামনাসামনি ব্যবহার করেন এবং যার অর্থ কাপল বাদে আর কেউ জানে না। তাই কাপল বাদে বাকিরা বেকুবের মতো এই ভাবের আদান-প্রদান দেখে যান। এগুলোর Reply-ও ঐরকম সাংকেতিকই হয়ে থাকে। চোখ মারা ইমোর ব্যবহার বেশি হয়। ;) একটা ছোট্ট শুধু হাসির ইমোর পেছনেও অনেক অর্থ লুকনো থাকে। :)
● পরস্পরের কমেন্টে লাইকের বন্যা বয়ে যায়। রিপ্লাইয়ের পরিমাণ দেখলে মনে হবে ফেইসবুকে যে চ্যাটিং বলে কিছু আছে তা এদের মনে নাই। :)
● রিলেশনের এ পর্যায়টায় স্ট্যাটাসের দৈর্ঘ্য কমে আসে। ইনফ্যাক্ট খুব রোমান্টিক দিন কাটিয়ে ফেইসবুকে দু'জনেই যে স্ট্যাটাসখানা দেন তার সাইজ খুব বেশি হলে ৮-১৫ শব্দের হয়। :)
● দু'জনকেই বা অন্তত একজনের মধ্যে অপরের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টের ওপর অধিকার জন্মেছে এমন আচরণ করতে দেখা যায়। কোন ফ্রেন্ড ফেইসবুকে কি বললো না বললো তা নিয়ে জবাবদিহিতাও করতে হয়।
● Newsfeed ভর্তি শুধু একে অপরের কমেন্টের রিপ্লাই আর লাইকের দেখা মেলে... ;)

ফোনের ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবর্তনগুলো বেশ মজার -

● FnF রেট কম এমন একটি সিম দু'জনেই ব্যবহার করবে। দরকার হলে নতুন সিম কার্ড কিনবে। কেউ কেউ নতুন হ্যান্ডসেটও।
● আগে SMS-এর প্রতি তেমন একটা আগ্রহ না থাকলেও ইদানিং হাত আর থামছেই না।
● রিলেশনের প্রথম দিকে রাতে কথা বলাটা একটা বড় বিষয়। দু’জনের একজনের এক্ষেত্রে আগ্রহটা একটু বেশিই হয়। রাতে ঠিকমতো কথা না হওয়াটা তার কাছে বিশাল Discredit বলে মনে হবে। কথা না বলা নিয়ে ঝগড়া পর্যন্ত হয়ে যায়। রিলেশনের এ পর্যায়ে রাত ১ টায় শুরু করে ভোর ৫/৬ টা পর্যন্ত কথা বলাও অস্বাভাবিক না।

৭. ঝগড়া, বিরহ, ফিরে আসা ও কিছু শিক্ষা: রিলেশনের শুরুর দিকে ঝগড়া খুব একটা আনকমন কিছু নয়। ঝগড়া প্রায়ই হতে পারে। In fact এখানে একটা মজা আছে।

* রিলেশনের শুরুর দিকের ঝগড়ার টপিকগুলো Silly হয় বা খুব সহজেই এড়ানো যেতো এমন হয়। রিলেশনের আয়ু যতো বাড়তে থাকে ঝগড়ার বিষয়গুলো ততো সিরিয়াস হতে থাকে। ঝগড়া কমার কারণ, প্রথম দিকে যতোবার ঝগড়া হয়েছে ততোবার একে অন্যের ব্যাপারে একটু একটু করে জেনেছে। বুঝতে পেরেছে কোন জিনিসটা 'ও'-র পছন্দ না, কোনটা বললে 'ও'-র অস্বস্তি লাগে, বা কোন টপিকটা তুললে ও বাইরে না বললেও ভেতরে ভেতরে ঠিকই রাগ করবে। প্রতিবার ঝগড়ার পরে ১০ গুণ বেশি সময় ধরে সেই ঝগড়া মেটানোয় ক্লান্ত আর বারে বারে ঝগড়ায় ক্ষত-বিক্ষত মনটা তাই সহজ হিসেব-নিকেশটা কষে adjustment-টা আপনিই করে নেয়। আর বিষয়াদি সিরিয়াস হতে থাকার কারণ, Silly বিষয়গুলোর ঝগড়াতো আগেই শেষ... এরপর যাই হবে সিরিয়াস ইস্যুতেই হবে।*

ব্যতিক্রম: যে কাপলরা অভ্যাসবশত ঝগড়া করে থাকেন তারকাচিহ্নিত অংশ তাদের জন্য নয়।

৮. পজেসিভনেস (Possessiveness): শব্দটা বাংলা করতে গেলে ভালো শোনাবে না - 'দখলদারি মনোভাব...'। ইংলিশটায় কিঞ্চিৎ রোমান্টিকতা আছে।

● 'পজেসিভনেস' শব্দটা শুনেই আঁতকে ওঠার কিছু নেই। ন্যূনতম পরিমাণ পজেসিভনেস ছাড়া রিলেশন টিকিয়ে রাখার কথা চিন্তা করাও ভুল। বিপত্তিটা হয় যখন পজেসিভনেসটা প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত হয়ে যায়, সন্দেহের পর্যায়ে চলে যায় বা ব্যক্তি স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করে। রিলেশনের একদম শুরুতে এই লঙ্ঘণটা খুব বেশি হয়। কারণ মনের মধ্যে হারানোর একটা ভয় কাজ করে। রিলেশনে যতো সময় যায়, যতো স্থিতিশীলতা আসে, ততো এই ভয়টাও লোপ পায়। তাতে পজেসিভনেস হারায় না, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হারে আর থাকে না।
● প্রথম প্রথম 'একটু পর পর ফোন দিয়ে এনগেজ কিনা চেক করা...' বা "তোমার ওয়ালে এইটা কি লিখসে, কারা এইসব আউল-ফাউল, তোমাকে অ্যাড করসে..." - বলা কিংবা "হঠাৎ বিকেলবেলা টিএসসিতে কি করো...?" - কড়া জিজ্ঞাসার ভঙ্গিতে এমনটা জিজ্ঞেস করলেও, রিলেশনে পরে হয়তো এমন সময়ও যাবে যখন সারাদিনে একবারও কথা হয়নি।
● মজার ব্যাপার - পজেসিভনেস রিলেশন থাকা অবস্থায় ছেলেদের অনেক বেশি থাকে, আর বিয়ের পর মেয়েদের।

৯. অন্যান্য:

● এটা অনেক পুরনো কথা এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঠিক। রিলেশনের এই পর্যায়ের ভাবুক মন সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। ঠিক যেভাবে ব্রেকআপের পরের বিদগ্ধ মনও ঘটায়।
● রিলেশনের পরে এমন একটা সময় আসে যখন এই প্রাথমিক পর্যায়ের সাথে তারা ঐ সময়ের তুলনা করবেন... কিছু বিষয়ে আফসোস করবেন আর কিছু বিষয়ে কত ছেলেমানুষী করেছেন তা ভেবে হাসবেন।

(এটা অত্যন্ত নির্লজ্জ একটি প্রচেষ্টা জ্ঞান জাহির করার। ইনফ্যাক্ট এই পোস্টের অবজারভেশন বাস্তবতা থেকে পুরোপুরি ভিন্ন হতে পারে। লেখক দাবি করেন না এই পোস্টে বলা সব কথা বাস্তবে একদম ঠিক ঠিক মিলে যাবে, তবে কারো কারো এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মিললেও মিলতে পারে।)


রিলেশনের ঝগড়া



উৎস: রিলেশনের ৯০% ঝগড়ার উপাদান চার ধরণের, যা ৪ ‘ফ’ নামেও পরিচিতি:

১. ফ্রেন্ডস (মিউচুয়াল ফ্রেন্ডরা বেশি)
২. ফ্যামিলি (প্রধানতঃ কাজিনরা)
৩. ফোন
৪. ফেইসবুক

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অধিকাংশ ঝগড়ায় এগুলোর অন্ততঃ একটি বা একাধিকের অবদান থাকে। আবার চলমান ঝগড়ার 'নিয়ামক' বা 'প্রভাবক' হিসেবেও কাজ করে এগুলো।

মাধ্যম: ঝগড়ার মাধ্যমগুলো চিহ্নিত করতে গেলেও মোট ৩টি 'ফ' -পাওয়া যাবে:

১. ফোন
২. ফেইসবুক
৩. ফেইস-টু-ফেইস (সামনাসামনি)

ঝগড়ার শুরুটা: ঝগড়ার শুরুটা সাধারণতঃ কোন একটা কটুক্তি/খোঁচা মারা কথা বা অভিমান বা জেরাযুক্ত প্রশ্ন থেকে। আবার দীর্ঘ নীরবতা বা দীর্ঘশ্বাস থেকেও জন্ম নিতে পারে ঝগড়া। কাপলের মানসিকতা, রাগের পরিমাণ ও মূল বিষয়ের গুরুত্বভেদে ঝগড়াটা শুরু হতে পারে একবারে বা দফায় দফায়। কিছু লক্ষ্যনীয় বিষয়:

● কয়েক দফা ফোনালাপে ঝগড়ার শুরু হতে পারে। দু'জনেই নিজেদের পয়েন্টগুলো মুখের ওপর বলে দিতে চায়। দফায় দফায় লাইনও কাটা হয়।
● ঝগড়া শুরুর পরপরই অনেকে নিজের বা বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডের ফ্রেন্ড (বিশেষতঃ মিউচুয়াল ফ্রেন্ডদের) বা কাজিন-টাজিনদের ঝগড়ার কথা জানায়। অনেকে আবার না জানালেও মন-টন খারাপ করে তাদের ফোন দেয়।
● অনেককে দেখা যায় নিজেদের কথা সরাসরি অপরজনকে না বলে ভায়া (বন্ধু/কাজিন প্রভৃতি) বলানোর। এতে করে সরাসরি তোপ থেকে মুক্তি মিললেও প্রায়ই কমিউনিকেশন গ্যাপের কারণে আরো বড় ঝগড়ার সৃষ্টি হয়।
● অনেক ঝগড়াই একদম এই প্রথম স্টেজেই মিলে যায়। এটার বেশ ক'টি কারণ আছে: 'পরস্পরের প্রতি টান' বা 'এই ঝগড়ার চাইতেও বড় কোন সমস্যা জীবনে আসা...' ইত্যাদি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কারণটা ক্লান্তি, বিরক্তি, 'কি দরকার, ভালোই তো ছিলাম...' বা স্যাক্রিফাইজিং মনোভাব।

প্রকারভেদ:

১. "“তুমি এটা বললা কেন?" -ঝগড়া: রিলেশনের ঝগড়ার মোস্ট টিপিক্যাল ফর্ম এই ধরণের ঝগড়া। গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডের বলা কোন কথা গায়ে বিপরীতজনের গায়ে লাগা থেকে এমন ঝগড়ার সূত্রপাত। তবে এ ধরণের ঝগড়া বেশিদিন টিকে না।
সূত্রপাত: ফেইস-টু-ফেইস, ফোন, ফেইসবুক

কমন ডায়লগ:
● "তাই বলে এভাবে বলবা?"
● "এটা দিয়ে কি mean করলা?"
● "ও... তোমাকে বললে তোমার মনে হয়... কিন্তু আমার কিছু মনে হতে পারবে না??"
● "আজব!!!"

২. "তুমি আর তোমার স্টুপিড ফ্রেন্ডরা..." - ঝগড়া: ফ্রেন্ডদের বলা কোন কথা বা কোন বেকুবী এ ধরণের ঝগড়ার জন্ম দেয়। তবে বাস্তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঝগড়ার উৎস বয়ফ্রেন্ডের বন্ধুরা। বন্ধুদের বেশি সময় দেয়া নিয়েও হতে পারে ঝগড়া।

কমন ডায়লগ:
● "থাকো তুমি তোমার ফ্রেন্ডদের নিয়ে!"

৩. ফেইসবুকে ঝগড়া:
ওরে বাপরে! ভয়ংকর ধরণের ঝগড়া এটা। মানুষ যে ফেইসবুককে ২য় জীবন বানিয়ে ফেলেছে তারই প্রভাব এটা। এ ধরণের ঝগড়া অনেক কারণে লাগতে পারে:

● অপরিচিত/বাস্তবে পরিচিত কিন্তু অপছন্দ ব্যক্তির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট (এবং/অথবা Accept করা)
● ছবি বা স্ট্যাটাসে উল্টোপাল্টা কমেন্ট
● লাগাতার কমেন্ট ও লাইক আদান-প্রদান
● চ্যাটে দেরি করে জবাব দেয়া
● ফেইসবুকে এক্সের পুনরাবর্তন ("আমাদের মধ্যে কিছু নাই, জাস্ট ফ্রেন্ড" - দাবি করে)

কমন ডায়লগ:
● "আমি বলছি তাই ব্লক করবা.... আর কোন কারণ তো দরকার নাই?"
● "তোমার ফ্রেন্ডদের নিয়েতো আমার কোন সমস্যা নাই...!!"
● "ফেইসবুকে কে আমার ফ্রেন্ড হবে না হবে সেটা কি তুমি ঠিক করবা?"

কমন প্রতিক্রিয়া:
● ফেইসবুক প্রোফাইল ডিঅ্যাক্টিভেট/ডিলেট।
● বিবাদমান ফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ডকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে রিম্যুভ।
● "আগামী কয়েক মাস ফেইসবুকে আসা হবে না...." টাইপের স্ট্যাটাস দিয়ে ৯ দিনের মাথায় কামব্যাক! B-)

৪. "ওই মেয়ের সাথে তোমার এতো কি?" -ঝগড়া: বুঝতেই পারছেন এই ঝগড়ায় মূল ভূমিকা গার্লফ্রেন্ডের। বয়ফ্রেন্ডের অন্য কোন মেয়ের সাথ অন্তরঙ্গতা/হেসে হেসে কথা বলা/সঙ্গ দান থেকে এ ধরণের ঝগড়ার সূত্রপাত। অনেক সময় ছেলের উদ্দেশ্য সৎ থাকলেও ঝগড়া বেঁধেই যায়।

কমন ডায়লগ:
● "আমি বললে তো কখনো করো না..."
● "OK যাও! ঐ মেয়ের কাছে যাও... আমাকে তো আর তোমার দরকার নাই..." (কৃত্তিম অভিমানের সুরে)
● "আমাকে তো আর এখন তোমার ভালো লাগে না.... আমিতো পুরান হয়ে গেছি..." (ডায়লগটি অত্যন্ত ক্ষ্যত এবং বললেও সাধারণত কৃত্তিম অভিমানের সুরেই বলা হয়ে থাকে)

৫. ইগনোরেন্স/অবহেলা ঝগড়া: গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডের প্রতি কোন অবহেলা বা Ignorance থেকে এ ঝগড়ার শুরুটা। স্বভাবগতভাবেই অ্যাটেনশন সিকিং হলেও মানুষ রিলেশনে এসে আরো বেশি মাত্রায় অ্যাটেনশন চায়। আর তার মধ্যে যদি কোন পক্ষের গাফিলতি হয়, তাহলে তো কোন কথাই নেই... মূহুর্তেই বেঁধে যায় তুমুল ঝগড়া। রিলেশনে ছেলেদের মধ্যে কেয়ারলেস ভাবটা বেশি দেখা যায়। আর তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরণের ঝগড়ার রাগটা জমতে দেখা যায় গার্লফ্রেন্ডের মনে।

কমন ডায়লগ:

● "একবারো খোঁজ নিসো...বলো?"
● "আধাঘন্টা ধরে আমি দাঁড়ানো..."
● "এমনিতেই দেখা হয় সপ্তাহে একবার.... তারপর ডেটে এসেও মোবাইলটা টেপাই লাগবে?"
● "৪টা পর্যন্ত জেগে ছিলাম... তারপর আর পারি নাই।"

৬. সন্দেহভাজন ঝগড়া: অন্য কারো সাথে বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড্রের রিলেশন চলছে - এমন সন্দেহের থেকে বা নিশ্চিত হয়েই এ ধরণের ঝগড়া শুরু হয়। এ ধরণের ঝগড়াই সবচেয়ে বেশি ব্রেকআপে রূপ নিতে দেখা যায়। মজার ব্যাপার মেয়েরা যেভাবে ছেলেদের সরাসরি জিজ্ঞেস করে ফেলে তাদের সন্দেহের ব্যাপার। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছেলেরা সেটা করে না। উল্টো তাঁরা খোঁচায়। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তথ্য বের করে করে মূল পয়েন্টে নিয়ে আসে।

কমন ডায়লগ:

● "১ ঘন্টা ধরে ওয়েটিংয়ে, কার সাথে এতো কথা?"
● "মেয়েটা কে?"
● "আগেতো এমন ছিলা না..."
● "তুমি গেসো কি না বলো? হ্যাঁ... বা... না!"
● " আমি যা বোঝার বুঝে গেসি..."
● "আর কিছু কি বলা বাকি আছে?"

৭. 'সময় দিতে না পারার' -ঝগড়া: ব্যস্ততার কারণে রিলেশনে প্রয়োজনীয় সঙ্গ বা সময় না দিতে পারা থেকে এমন ঝগড়ার সূত্রপাত।

কমন ডায়লগ:
● "কাজ আমার থাকে না? ব্যস্ত কি শুধু তুমি একাই থাকো?"
● "তুমি আমাকে ব্যস্ততার কথা শুনাচ্ছো?"
● "ফোন না হোক - একটা মিসকল বা ম্যাসেজতো তো অ্যাটলিস্ট দিতে পারতা..."

৮. সিলি ঝগড়া: নিজেদের খুবই ক্ষুদ্রাতি-ক্ষুদ্র বিষয় ধরাধরি নিয়ে এমন ঝগড়া হয়। ঝগড়ার টপিক যে কোন বিষয় হতে পারে, তবে খুব সহজেই এড়ানো যেতো এমনটাই সিলি হবে। যেমন:

● অমুক নায়িকা/মডেলকে Hot লাগে।
● ফোন কাটলা কেন?
● এইটা কি স্ট্যাটাস দিসো?
● "অমুক ফ্রেন্ডকে ডাকলা কেন?"
.....ইত্যাদি.....

৯. দূরত্ব: দূরত্ব রিলেশনের শান্তির বড় শত্রু এবং ঝগড়ার প্রভাবক।

● Long Distance রিলেশনশিপে দূরত্বটাই অধিকাংশ ঝগড়াকে টেনে এতোদূর নিয়ে যায়, হয়তো কাছাকাছি থাকলে একবার দেখা হলেই এটা আর কোন ব্যাপারই ছিলো না।

● দূরত্ব মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ: যে ছেলেটি ঢাকায় থেকে রাজশাহীর মেয়েটির সাথে রিলেশন চালিয়ে যাচ্ছে সে স্বভাবতই জানে না মেয়েটি কোথায় যাচ্ছে/কি করছে/কার সাথে দেখা করছে। সারাদিন হয়তো মাথার মধ্যে এ কথাগুলাই কাজ করে। আর তার ওপর ফোন এনগেজ পাওয়া আর ফেইসবুকে রোমান্টিক স্ট্যাটাস দেখে সন্দেহপ্রবণতা তো আছেই। সব মিলিয়ে একটা খুবই বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা হয়। আর সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো, এক্ষেত্রে চাইলেও রিলেশনের ঝগড়ার মহৌষধ: 'সামনা-সামনি দেখার' সুযোগটাও নেই।

● সামনা-সামনি দেখা হওয়াটা ঝগড়ার সবচেয়ে বড় ওষুধ। হয়তো পুরো ঝগড়াটাই হয়েছে ফোনে/ফেইসবুকে এবং দু'জনেই অথবা একজন তার যুক্তিবলে শক্ত অবস্থানে আছেন। কিন্তু শুধু একবার সামনে দেখা হলে দু'জনের কেউই হয়তো আর যুক্তির ধারও ধারবেন না। সামনা সামিনি দেখার পর ঝগড়া না মিটিয়ে যাওয়াটাই বরং বেশি শক্ত।

● রিলেশনের একটা পর্যায়ে গিয়ে (যাদের প্রথম রিলেশন) দু'জনেই 'দেখা করার' সাথে ঝগড়া মেটানোর সম্পর্কটি অনুধাবন করে, একে ওষুধ হিসেবে কাজে লাগানোর বুদ্ধিটা শিখে ফেলেন।

কমন ডায়লগ:
● "তোমার সাথে কথা আছে..."
● "কার সাথে দেখা করেছো? কাকে দেখে স্ট্যাটাস দিসো?"
● "তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছো?"
● "দেখা করবো... কখন পারবা?"
● "আমার আর কিছু ভালো লাগছে না... প্রতিবার কি ঝগড়া মিটাতে আমাদের এভাবে দেখা করতে হবে? আমরা কি ঝগড়া না করে থাকতে পারি না? এই জন্য রিলেশন করেছিলাম?"
● "মনের ভেতর এতো কিছু ভেবে চিন্তে রাখি... তোমায় বলবো বলে। কিন্তু বিশ্বাস করো, তোমার কাছে আসলে সব ভুলে যাই। আর কিছু বলতে ইচ্ছে করে না... রাগটা ধরে রাখতে পারি না।"
● "প্রতিবার সেই একই গল্প। ঝগড়া হবে। দু'জনে কেঁদে-কেটে একাকার হবো। কিন্তু দেখা করার পরে আবার সব ঠিক... আমার আর ভালো লাগে না..."

১০. বয়স: কাপলের বয়স ঝগড়ার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান:

● সমবয়সী/কাছাকাছি বয়সের কাপলের ঝগড়াগুলো অপেক্ষাকৃত কম ভায়োলেন্ট হয়। সেখানে তর্কের চাইতে যুক্তির খেলাই বেশি চলে। কথার মার-প্যাঁচও তাকে অনেক বেশি। Direct কথা খুব কম হয়, আর হলেও একদম ঝগড়ার শেষের দিকে গিয়ে হয়। এধরণের ঝগড়া চলেও বেশ ধীর গতিতে। কোন কোন ক্ষেত্রে মাস অব্দি গড়াতে পারে।

● কাপলের বয়সে মোটামুটি পার্থক্য থাকলে ঝগড়াগুলো তুলনামূলকভাবে এক্সট্রিম পর্যায়ের হবে। এ জগড়ায় প্রায় সব কথাই Direct হয়ে থাকে। নিজের অবস্থানটা জানিয়ে দেয়ার ইচ্ছেটা দু'জনের মধ্যেই প্রবলভাবে কাজ করে। এ ধরণের ঝগড়া বেশ তাড়াতাড়ি এগোয় এবং মিটেও যায় (বা বিপরীতটা) খুব তাড়াতাড়ি। ঝগড়ার একদম শেষে গিয়ে একজন আরেকজনকে ছেড়ে থাকতে পারবে না, এর বাদে আর খুব কম বৈধ Logic-ই এ ধরণের ঝগড়ায় খুঁজে পাওয়া যাবে।

● কথায় কথায় রিলেশন ভেঙে দেয়ার বিষয়টিও বেশি দেখা যায়। এমনটা সমবয়সীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় না, কারণ দু'জনেই জানে দু'জনের দৌড় কতোটুকু।

*উল্লেখ্য, এখানে সিরিয়াস রিলেশনশিপ নয় এমন রিলেশনে কাপলের 'কথায় কথায় ছেড়ে চলে যাওয়ার' বিষয়টি নিয়ে বলা হচ্ছে না। সেটা খুবই স্বাভাবিক।*

কমন ডায়লগ:
● "তাইলে যাও? তোমার তো সেটাই ইচ্ছা তাই না? রিলেশন রাখার দরকার কি?"
● "মনে রেখো, ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা তুমি বলছিলা... আমি বলি নাই..."

Bonus - একটি সাধারণ ঝগড়ার নমুনা ডায়লগ চক্র:

ওকে, বাই... ভালো থেকো... তুমি অনেক ভালো কাউকে deserve করো। আমার মতো ফালতু ছেলে/মেয়েকে তোমার লাগবে না। শুধু মনে রেখো... কেউ একজন ভালোবেসেছিলো। ” (ফোন কাট)

(আবার রিং)

“চলে যাবা? না? ওকে যাও। সবতো এমনিতেই গেছে... তুমি আর থেকে কি করবা? আসলে আমার কপালেই ছিলো না।” (ফোন কাট)

(আবার রিং)

“যাবো না... আমি পারবো না...”

(নীরবতা)

“নাহ, আর থেকে কি হবে? সবতো বলেই দিসো...”

(নীরবতা)

“I'm Sorry... আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না (এখানে নাম হবে)।”

“পারবা... মুখে যখন আনতে পারসো তখন থাকতেও পারবা। আর তোমাকে ছাড়া আমার কিছু হবে না। চিন্তা করো না, আমি উল্টা-পাল্টা কিছু করবো না। একটু মন খারাপ হবে... হয়তো একটু কাঁদবো... হয়তো অনেক। হয়তো আর কোনদিন কাউকে বিশ্বাস করতে পারবো না... But it's OK... আমি ভাববো আমার কপালে ছিলো...”

“Please...”

(নীরবতা)

“Please... আমি আর পারছি না।”

(নীরবতা)

“ওকে ঠিক আছে... ফিরবা নাতো। ওকে! মনে রাইখো আর কোনদিন আমার ভয়েস শুনতে পারবা না। চাইলেও পারবা না। বাই!” (ফোন কাট)

(চক্র শেষ!)

১. ক্যারিয়ার ও বিয়ে: ক্যারিয়ারের ঝগড়াটা রিলেশনের প্রো-লেভেলের ঝগড়া। ইনফ্যাক্ট এই ঝগড়ায় একটা ব্যাপার নিশ্চিত হয়েই যায় - বিয়েটা এখন শুধু সময়, সুযোগ আর ভাগ্যের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু ছেলের চাকরি, ক্যারিয়ার গোছানো ও শেষমেষ বিয়ের এ ঝগড়াটা রিলেশনের আর যে কোন ঝগড়ার চেয়ে বৈশিষ্ট্যে আলাদা -

● মেয়ে ছেলেকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়। এ সময়রে মধ্যে তাকে চাকরী খুঁজে বের করে ক্যারিয়ার গোছাতে হয়।

● আবার সময় বেঁধে দেয়া গতে পারে বিয়ের ক্ষেত্রেও। বাসায় সম্বন্ধের কথা তোলা বা বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর (বা পালিয়ে বিয়ে) জন্য বেঁধে দেয়া হয় সময়। অনেকদিন ধরে রিলেশনের পর একটা ছেলে এ পর্যায়ে এসে টের পায় বিয়েটা আসলে সহজ নয়।

● রিলেশনের প্রথমে "পরে দেখা যাবে বলে" যে ব্যাপারগুলোকে সে ঠেলে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে তা এবার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কমন ডায়লগ:

● "আমি আর অপেক্ষা করতে পারবো না, ৪ মাস সময় আছে তোমার কাছে। এর মধ্যে কিছু করো, না হলে আমাকে ধরে বিয়ে দিয়ে দিবে। তখন কি করবা?"
● "বাসায় একটার পর একটা সম্বন্ধ আসছে। আর কতদিন ঠেকিয়ে রাখবো আমি?"
● "বাসায় বলো... বাকিটা আমি দেখবো। তুমি শক্ত থেকো।"
● "যখন হাত ধরেছিলা তখনতো সাহস কম ছিলো না, এখন হঠাৎ বিয়ের কথা ওঠাতে পিছপা কেন?"
● "আমার সমস্যাটাতো বোঝো..."

২. সিরিয়াস ঝগড়া: সিরিয়াস ঝগড়ার রূপ নয়, বিষয়াদি সিরিয়াস। ঝগড়ার মূল আলোচনা এমন বিষয় নিয়ে হয় যেটা রিলেশনের একদম মূলস্তম্ভের সঙ্গে জড়িয়ে আছে (বিশ্বাস, ভালোবাসা, বিয়ে, তৃতীয় কেউ ইত্যাদি)। সিরিয়াস ঝগড়া না মিটলে রিলেশন ভেঙে যাওয়া প্রায় অবধারিত এবং এ ধরণের ঝগড়ায় ভাঙা রিলেশন ফের জোড়া লাগে কম যদি না মনোবল ও টানটা প্রবল হয়।

ঝগড়ার মাঝে: ঝগড়ার মাঝখানটা বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব আকাশের মতো -

● এ সময়টায় অনেকেই ওয়েটিং গেইম খেলে। অন্যপক্ষ থেকে কিছু না বলা পর্যন্ত নিজেও কিছু বলে না।
● কেউ কেউ "তোমাকে ছাড়াও আমার দিব্যি চলে যাচ্ছে..." - ধরনের মানসিকতা দেখান।
● নিজের দোষ নেই জেনেও রাগে ও অভিমানে "আচ্ছা যাও সব দোষ আমার..." এমনটাও বলতে দেখা যায় কাউকে কাউকে।
● ঝগড়ায় গোঁ ধরে বসে থাকলেও অনেকেই কোন-না-কোন ভাবে চুপি চুপি প্রিয়জন কেমন আছে, কি করছেন এমনটা জেনে নিতে নিতে ভুলেন না।
● যুক্তিনির্ভর কাপলদের ঝগড়ার এ পর্যায়টা খুব দীর্ঘ হয়। অনেকই আবার অধৈর্য্য হয়ে যান, রাগটা আর ধরে রাখতে পারেন না। কারো কারো ঝগড়ায় মেটানোর মানসিকতা থাকলেও শুধু যুক্তিতে হেরে যাওয়ার ভয়ে আগ বাড়িয়ে ফোনটা আর দেন না। উল্টো কলটার অপেক্ষায় থাকেন।

ঝগড়ার শেষ: ঝগড়ার শেষটা খুব অদ্ভূত -

● পুরোটা ঝগড়ার সময় দু'জনের কেউই হয়তো নিজেদের কোন দোষ আছে বলে মানতে রাজি ছিলো না। অথচ ঝগড়া শেষ হবার পর এখন আর যেন নিজের দোষ খুঁজে পেতে সমস্যা হয় না।
● ঝগড়া শেষে অনেক কাপলই রিলেশনের নতুন অর্থ খুঁজে পান। একসাথে থেকে তারা কতোটা সুখী তার শোকর আদায় করেন।
● ঝগড়ার পর বেশ ক'দিন পর্যন্ত দু'জনের আচার-ব্যবহারেই একটা বেশ 'পজিটিভ অ্যাফেক্ট' থাকে (সারাক্ষণই ঝগড়ার উপরে থাকে এই টাইপ বাদে)। অনেক বেশি সহনশীল, হেসে হেসে বলা, "কোন ব্যাপারই না..." টাইপের আচরণ দেখা যায়। কিন্তু সমস্যা কিন্তু আবার ঠিকই হয়।
● সব ঝগড়ার শেষটা মধুর হয় না। রিলেশন শেষ হয়ে যায় বা হওয়ার অপেক্ষা থাকে।

কমন ডায়লগ:
● "ভুল আমারো ছিলো..."
● "আমরা দু'জনেই বাচ্চাদের মতো করেছি..."
● "তোমার সমস্যা হলো তুমি বলোনা... এরপর থেকে এমন কোন সমস্যা হলে আগে আমাকে বলবা..."

উল্লেখ্য: ঝগড়া মেটাতে ফ্রেন্ডদের কার্যকারিতা বেশি, এক্ষেত্রে সচরাচর কাজিনদের পারফরমেন্স খুবই খারাপ।

(এটা অত্যন্ত নির্লজ্জ একটি প্রচেষ্টা জ্ঞান জাহির করার। ইনফ্যাক্ট এই পোস্টের অবজারভেশন বাস্তবতা থেকে পুরোপুরি ভিন্ন হতে পারে। লেখক দাবি করেন না এই পোস্টে বলা সব কথা বাস্তবে একদম ঠিক ঠিক মিলে যাবে, তবে কারো কারো এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মিললেও মিলতে পারে।)


ছেলেদের ব্রেক আপ





১ম পর্যায়, "আমার মন মানে না...":
এই পর্যায়টা ব্রেক আপের সবচেয়ে ইমোশনাল পর্যায়। একই সাথে গুরুত্বপূর্ণও - কেননা এই সময়ে নেয়া যে কোন সিদ্ধান্ত আলটিমেটলি জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

ব্রেক আপের এ পর্যায়ে কারো ভেতর থেকে যে ইমোশনগুলো বেরিয়ে আসে তা একদমই Raw ইমোশন। অধিকাংশের ক্ষেত্রেই ইমোশনটা বেরোয় বুক ফাটা কান্না বা তীব্র মানসিক বেদনার রূপে। তবে ব্যতিক্রমী কারো কারো ক্ষেত্রে ব্রেকআপ স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে যেটাই হোক না কেন, তা স্বাভাবিকের বাইরে, এর সবই আবেগের বশে।

যাদের জন্য ব্রেকআপটা কষ্টের তাদের মন মানেনা... "কেন আমিই এতো দুর্ভাগা" - এই প্রশ্ন বারবার ফিরে আসে মনে।

ব্রেক ঠিক পরপর এই তাৎক্ষণিক পর্যায়টিতে অধিকাংশ মানুষ ৩টি কাজের একটি করে:

ক. নিজের ক্ষতি করে (আত্মহত্যা, ড্রাগস ইত্যাদি)
খ. যে মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো তার ক্ষতির চেষ্টা করে (ফেইসবুক/ইমেইল হ্যাক, নেটে বাজে ছবি ছাড়া, মোবাইল নাম্বার ম্যানিপুলেশন)
গ. যার কারণে এই ব্রেক আপ (অন্য আরেক ছেলে হতে পারে) তার ক্ষতির চেষ্টা করে।

এবং আরেকটি টাইপ আছে যারা এই ৩টির একটিও করে না - They just let it go. এরা আবার ৩ প্রকার:

ক. মন খারাপ করে থাকার দল
খ. ‌'এই বেশ ভালো আছি' বেশ ধরা দল
গ. ঘন্টায় ঘন্টায় নতুন রিলেশন আর ব্রেকআপের কারণে এদের মনে ব্রেকআপ আর নতুন করে কোন অনুভূতির জন্ম দেয় না - সেই দল (সঙ্গতঃ কারণেই এই পোস্টে তাদের কথা আলোচনা করা হয়নি)

উপর্সগ:
১. শুধু ওকে ফোন দিতে ইচ্ছে করে/দেখা করতে ইচ্ছে করে/মনে হয় এখনই গিয়ে দেখা করি - যদি জানা আছে তাতে সিদ্ধান্ত বদলাবে না।
২. নিজে থেকেই নিজের দোষ/ত্রুটি বের করে ব্রেকআপের পিছনে নিজের দোষগুলো খুঁজে বের করা - যদিও হয়তো আদতে নিজের কোন দোষই নেই।
৩. ওর রেখে যাওয়া স্মৃতি চিহ্নগুলো হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখা... মন আরও খারাপ করা। কেউ কেউ অবশ্য এগুলো নষ্ট করে ফেলে।

কমন ডায়ালগ:
১. "আমার তো কোন দোষ ছিলো না... তাহলে কেন....?
২. "সব মেয়ে এক..." (এটা একটা বিশেষ টাইপের ছেলেরা বলে)
৩. "আমি আর কখনও রিলেশন করতে পারবো না..."

অত্যন্ত ইমোশনাল এ পর্যায়টাকে ঠিক শব্দে প্রকাশ সম্ভব নয়। যতো কম বলে শেষ করা যায় ততোই ভালো। তাই পরের পর্যায়ে চলে যাচ্ছি।

২য় পর্যায়, সান্ত্বনা:
আপনার ফ্রেন্ডকূল এবং পরিচিতরা যারা আপনার রিলেশনের ব্যাপারে জানতো তারা এ পর্যায়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে আপনাকে সান্ত্বনা দিতে। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, মনে মনে আপনার বেশির ভাগ বন্ধুই (স্পেশালি যাদের রিলেশন আছে) কিন্তুই খুশি। খুশি এ জন্য যে - "যে এটলিস্ট তারা আপনার মতো এতো দুর্ভাগা না..."। এটা মানুষের আদি ধর্ম। অপরের বিপদের কথা চিন্তা করলে সচেতন বা অবচেতনভাবে আমাদের মন আনন্দ পায়।

"জাস্ট ঐ কষ্টকর পরিস্থিতিতে সে নেই" - এই চিন্তাটাই মনে আনন্দের খোরাক জোগানোর জন্য যথেষ্ট। এটা খারাপ কিছু নয়। এটা মানুষের ধর্ম। ইনফ্যাক্ট এটার কিছু ভালো দিক আছে। যেমন ধরুন, যেদিন আপনার ব্রেকআপের কথা আপনার ফ্রেন্ডরা শুনলো, পরের বার তাদের গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ডের সাথে আলোচনায় এ প্রসঙ্গটা একবার হলেও অন্ততঃ উঠবে। তখন তারা একে অপরকে প্রমিস করবে - তারা কখনও এভাবে বিচ্ছেদ ঘটাবে না। রিলেশন যে পর্যায়েই থাকুক না কেন - তারা আবারও নতুন করে অনুধাবন করবে, একে অপরকে পেয়ে তারা কতোটা লাকি। নিজেদের রিলেশনের অবস্থা নিয়ে শঙ্কিত ছিলো, এমন কাপলদের নিজেদের সমস্যা আর কিছু বলে মনেই হবে না। প্রিয় বন্ধুর ব্রেকআপের পর এ সময়টায় গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড হঠাৎ করেই একটু বেশিই সুইট হয়ে যেতে পারে - তবে এটা টেম্পোরারি। এর কোন স্থায়ী প্রভাব নেই।

যাই হোক এ পর্যায়ে ফ্রেন্ডকূল ও পরিচিতদের সান্ত্বনা আর উপদেশ বাণীতে সিক্ত হবেন আপনি -

১. "যা হয়েছে ভালো জন্য হয়েছে..." (হ তোরে কইসে!)
২. "জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না..."
৩. "এটা ক্যারিয়ার গড়ার সময়..." (নরমালি এটা বন্ধুরা না, স্বজনেরা বলে)
৪. "নিশ্চয়ই তোমার কপালে জন্য এর চাইতেও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে..."
৫. "থাক দোস্ত... বাদ দে..."
৬. "ফ্রেন্ডদের সাথে সময় কাটাও..."
৭. "ব্যাপার না... সব ঠিক হয়ে যাবে..."
৮. "চল বাইরে চল..."

আপনার রিলেশন সম্পর্কে আপনার ফ্রেন্ডদের আগে না বলা কিছু তথ্যও উঠে আসতে পারে এ পর্যায়ে -

১. "এমনিতেও এই রিলেশন নিয়ে তোর পরে সমস্যা হইতো..."
২. "ওর চাইতে হাজার গুণ বেটার মেয়ে তুই পাবি..." (৫ মাস আগেও "তোদের দেখে ঈর্ষা হয় বলার পর")
৩. "এমনিতেও ওর অনেক সমস্যা ছিলো..."
৪. "আমার কেন জানি আগে থেকেই মনে হচ্ছিলো রিলেশনটা টিকবে না..."

৩য় পর্যায়, নিজেরে বুঝাই:
ব্রেক আপের এই পর্যায়টা একান্তই নিজের। নিজের জীবন, ক্যারিয়ার সব কিছুই নতুন করে শুরু করার একটা প্রত্যয় এই স্টেজে জন্মায়। এ পর্যায়ে একটা ছেলে এমন অনেক কিছুই করবে, যা সে সাধারণ অবস্থায় কখনোই করতো না। এমন অনেক কাজ সে করবে যা এইতো ক'দিন আগেও তার কাছে ছ্যাবলামি মনে হতো। এমন অনেক মানুষ যাদের সাথে দীর্ঘদিন কোন যোগাযোগ ছিলো না/ বা অনেকটা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গিয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ বাড়তে পারে। পুরো ব্যাপারটাই আসে জীবনে সামগ্রিক পরিবর্তনের একটা চিন্তা থেকে।

৪র্থ পর্যায়, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো:
এ পর্যায়ে সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর একটা প্রবণতা দেখা যায়। বাসার বিভিন্ন কাজে এবং ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে অন্তরঙ্গতা বাড়ে। পুরো দুনিয়া কেমন একটা ‌'মায়ার চশমা' দিয়ে ফিল্টার হয়ে চোখে এসে ধরা দেয়। মানুষের উপকার করতে ইচ্ছে করে। মানুষের সাথে একটু বেশিই নরমভাবে কথা বলার প্রবণতাও দেখা যায়।

উপসর্গ:
১. বন্ধুবান্ধবদের সাথে বের হয়ে তাদের বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ডেদের মধ্যে রিলেশনের অন্তরঙ্গতা দেখে খুব প্রচন্ড ঈর্ষা ও অস্বস্তি।
২. কথায় কথায় বন্ধুদের কাছে - "ইশ ও এইটা করতো...", "আই উইশ ও এইটা দেখতো..." বা "আমি আর ও প্রায়ই এটা করতাম..." - টাইপের কতাবার্তা।
৩. সুযোগ পেলেই মানুষকে নিজের ব্রেকআপের কথা জানানো, সহানুভূতির আশায় নয় - এটার মধ্যে কোথায় যেন ক্রেডিট নেয়ার মতো বিষয় আছে।
৪. "জীবনে অনেক কিছু দেখে ফেলেছি..." টাইপের মানসিকতা।
৫. ফেইসবুকে নিজের জীবনদর্শন তুলে ধরে স্ট্যাটাস দেয়া। কারো কারো স্ট্যাটাস দেখলে মনে হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে।
৬. দাড়ি রাখা।

৫ম পর্যায়, আমি যেন কার আশায আশায় থাকি:
এতোদিনে আপনার ব্রেকআপের ঠিক পরপর টাটকা ক্ষত অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। তবে পরিচিত যায়গা, পরিচিত মানুষ দেখলে বুক ফাঁকা ফাঁকা লাগে। পরিচিত জায়গা দিয়ে কোথাও যাওয়ার সময় আগের কথা মনে পড়ে। সাথে একটা ভয় কাজ করে যদি দেখা হয়ে যায় - তাহলে কি হবে? আবার মনে মনে ঠিকও করে ফেলেন দেখা হলে কি করবেন। যদিও ভয় পাচ্ছেন দেখা হওয়ার বিষয়টা চিন্তা করে, আবার কাইন্ড অফ যেন চাচ্ছেনও দেখা হোক।

৬ষ্ঠ পর্যায়, নতুন করে আবারও
ব্রেকআপের স্মৃতি মনে আর অবশিষ্ট নেই তেমন একটা -শুধু খুব অকেশনালি মনে পড়ে। মনে মনে আপনি ঠিক করে ফেলেছেন ওর সাথে সামনে কখনও দেখা হলে (তা নতুন বয়ফ্রেন্ড সহই হোক না কেন) আপনি ওকে ওর নতুন লাইফের জন্য কনগ্র্যাচুলেট করবেন - যেন এতোটুকু মানসিক শক্তি আপনি অর্জন করেছেন।

আপনার মধ্যে মেয়ে দেখলেই আগ্রহ জন্মাচ্ছে। বন্ধুকূলকেও জানিয়ে দিয়েছেন আপনি রেডি - হয়তো খুঁজতেও বলে দিয়েছেন।

উপসর্গ:
১. অনলাইনে/ফেইসবুকে বা ফ্রেন্ডের মাধ্যমে নতুন মেয়েদের সাথে পরিচয় হওয়া মাত্র তাৎক্ষণিকভাবে রিলেশনের জন্য মনস্থির করা। (যদিও আপনি নিজেও জানেন ৯৯% চান্স যে সেটা কাজে আসবে না)
২. ডার্টি জোকস/গালি প্রিয়তা - যদিও আপনি এসবের জন্য মোটেও বিখ্যাত নন।
৩. নিজের মধ্যে সাময়িক লুইচ্চামি গ্রো করা।
৪. হঠাৎ করে আপনার মনে হচ্ছে রিলেশনে থাকা অবস্থায় জগৎটা অনেক সহজ ছিলো, সবকিছু খুব নিশ্চিৎ ছিলো - হাত বাড়ালেই আরেকটা হাতের ছোঁয়া, চাইলেই একটা কাঁধে মাথা রাখা। কিন্তু এখন রিলেশন ভেঙে যাওয়াতে জগৎটাকে অনেক কঠিন মনে হচ্ছে। আবারও নতুন করে রিলেশন, আবারও নতুন করে শুরু আদৌ হবে কিনা - ধারণাটাকে অলরেডি আপনি প্রশ্নবিদ্ধ করতে শুরু করেছেন। ঠিক প্রথম রিলেশনটার আগে যেমনটা মনে হয়েছিলো আপনার।

......................................................................................................

* লেখক দাবি করেন না এই পোস্টের সবকিছু সবার ক্ষেত্রে খাটবে বা 'খাটবেই'। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে কিছু কিছু অবশ্যই খাটবে।

* ঘটনার যে ধারবাহিকতা পোস্টে বজায় রাখা হয়েছে সেটি কোন স্বতঃসিদ্ধ ধারা নয়। এই পোস্টে এককটি ঘটনা একেকজনের জীবনে একেক ক্রমে আসতে পারে।

* লেখক বিশ্বাস করেন এই পোস্টের অনেক কিছুই একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনে কখনোই ঘটবে না।

* কেউ যদি এই লেখাকে ব্রেকআপ বিষয়ে লেখকের নিজস্ব বক্তব্য হিসেবে অভিহিত করতে চান তাতে লেখকের কোনই সমস্যা নেই।


প্রেম - কত প্রকার ও কি কি - সবিস্তারে বর্ননা ♥♂♀



১. প্রথম প্রেম: জীবনের প্রথম প্রেম সবার কাছেই স্মরনীয় হয়ে থাকে। প্রথম প্রেমের কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই তবে অনেকের ক্ষেত্রেই খুব কম বয়সে প্রথম প্রেম এসে থাকে। প্রথম প্রেম বেশিরভাগ সময়ই আদতে প্রেম হয়না, সেটা হয়ে থাকে Infatuation। প্রথম প্রেম হতে পারে কোন বাল্য বন্ধু, হতে পারে গৃহশিক্ষক বা স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষিকা, হতে পারে বয়সে বড় কোন আপু, হতে পারে কোন ফিল্মের নায়ক বা নায়িকা, হতে পারে পাড়ার কোন হ্যান্ডসাম তরুনী বা বড়ভাই। কারো কারো ক্ষেত্রে আবার জীবনের প্রথম প্রেমই একমাত্র প্রেম।

২. প্রথম দেখায় প্রেম/Love at First Site: প্রথম দেখাতেই এই ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। এ ধরনের প্রেম অনেক ক্ষেত্রেই একতরফা হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়। প্রথম দেখাটা হতে পারে কোন বিবাহ অনুষ্ঠানে, শপিং মল, কলেজ, ভার্সিটি, কোচিং সেন্টারে, স্যারের বাসায়, বন্ধু আড্ডায়। এমনকি বন্ধুর মোবাইলে ছবি দেখেও এ ধরনের প্রেমের শুরু হতে পারে। এ ধরনের প্রেমে প্রায় অবধারিতভাবেই তৃতীয় পক্ষের (বন্ধুকূল বা বড়ভাই) সাহায্যের দরকার পড়ে। এ ধরনের প্রেমের সূত্রপাতে রূপ সৌন্দর্য্য ও দৈহিক সৌন্দর্য্যের ভুমিকাই বেশি।

৩. বন্ধুত্ব থেকে প্রেম: এই ধরনের প্রেমের ক্ষেত্রে প্রেমিক ও প্রেমিকা দু'জনেই প্রথমে বন্ধু থাকে। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব কালের বিবর্তনে প্রেমে রূপ নিতে থাকে, অনেক সময়ই দু'জনেরই অজান্তে। তবে আশেপাশের মানুষ (বিশেষত বন্ধুকূল) কিন্তু ঠিকই খেয়াল করে। দুঃখজনকভাবে এধরনের প্রেম অনেক সময়ই অকালে ঝরে যায় কোন একতরফা সিদ্ধান্ত বা পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে। অনেকে বন্ধুত্বের এই রূপান্তর মেনে নিতে পারেনা বলে অনুশোচনায় ভোগে - বিশেষত মেয়েরা।

৪. একরাতের প্রেম/One Night Stand: এগুলোকে প্রেম বললে পাপ হবে। ৯০% ক্ষেত্রেই ছেলেরাই এ ধরনের প্রেমের আয়োজক। দৈহিক বাসনাকে পূর্ণতা প্রদান করাই এই প্রেমের প্রধান উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য পূরণের পূর্বে কিছু নাম মাত্র ডেটিং হতে পারে। উদ্দেশ্য পূরণের জনপ্রিয় স্থান: কোন হোটেল, খালি ফ্ল্যাট, সমুদ্রতীরবর্তী কোন শহর।
এই ধরনের প্রেমের মূলমন্ত্র হলো:
"আজকে না হয় ভালোবাসো, আর কোনোদিন নয়........"

৫. বিবাহোত্তর প্রেম: এই প্রেম শুধুমাত্র স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দেখা যায়। বিয়ের ঠিক পর পর প্রথম কয়েক মাস এই প্রেম প্রবল থাকে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পূর্বপরিচিত নয় এমন দু'জনের মধ্যে এ্যারেন্ঞ্জ বিয়ে হলে এই ধরনের প্রেম প্রবল রূপে পরিলক্ষিত হয়। প্রেম করে বিয়ে হলে সেক্ষেত্রে বিবাহোত্তর প্রেমে ভাঁটা পড়ে বলে একটি মতবাদ প্রচলিত আছে, কবে এর সত্যতা পরীক্ষিত নয়। বিবাহোত্তর প্রেম ফলাতে হানিমুনের জুড়ি নেই।

৬. পরকীয়া প্রেম: বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন পুরুষ বা মহিলার সাথে প্রেমকেই পরকীয়া প্রেম বলে। পরকীয়া প্রেমের মূল কারনগুলো হলো:

ক. সময়ের সাথে সংসার জীবনের প্রতি অনাগ্রহ বা তিক্ততা চলে আসা।
খ. শারীরিক চাহিদা পূরণে স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি একঘেঁয়েমি চলে আসা।
গ. শারীরিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর অক্ষমতা বা অপূর্ণতা।
ঘ. নিতান্তই এ্যাডভেঞ্চার-প্রিয়তা, লুকিয়ে প্রেম করার স্বাদ অনুভব করা।

মহিলাদের মধ্যে পরকীয়া এদেশে এখনো ততোটা জনপ্রিয় নয় যতোটা পুরষদের মধ্যে। পুরুষদের পরকীয়া প্রেমের ক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যাক্তিটি কম বয়সী কোন অল্প বয়সী মহিলা এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে যুবতীও হয়ে থাকেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যাক্তিটি সাধারণত কোন মধ্যবয়সী পুরুষ হয়ে থাকেন। ৩০-৪৮ বছর বয়সীদের মধ্যে পরকীয়া প্রেম বহুলভাবে পরিলক্ষিত হয়।

৭. অপরিণত প্রেম/কম বয়সে প্রেম/না বুঝেই প্রেম: এ ধরনের প্রেম সাধারণত স্কুলে পড়ুয়া অবস্থায় হয়ে থাকে। মেয়েরাই এ ধরনের প্রেমে বেশি পড়ে। তবে ছেলেরাও পড়ে। প্রেমিক প্রেমিকাদের দু'জনই সমবয়সী হতে পারে। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রেমিক তার চেয়ে বয়সে বড়ও হতে পারে। তবে এ ধরনের প্রেমের সাফল্যের হার কম - অর্থাৎ এ ধরনের প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় খুব কম ক্ষেত্রেই।

৮. কর্মক্ষেত্রে প্রেম: কর্মসূত্রে দু'জন মানুষের পরিচয়ের মাধ্যমে এ ধরনের প্রেম গড়ে ওঠে। উক্ত দু'জন হতে পারেন কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর দু'জন কর্মকর্তা অথবা কোন প্রজেক্টে পরস্পরের পার্টনার। অফিসে নতুন জয়েন করেছেন এমন কোন মেয়ের সাথে এরূপ প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য অফিসের পুরুষ কর্মকর্তাদের মাঝে তাগিদ দেখা যায়। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়।

৯. মোবাইল প্রেম: বন্ধুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে বা ফোনবুক থেকে চুরি করে, পাড়ার ফ্লেক্সির দোকান থেকে সংগ্রহ করে, অন্য কোন সুত্র থেকে নাস্বার পেয়ে বা নিতান্তই মনের মাধুরী মিশিয়ে কোন নাম্বার বানিয়ে তাতে ফোন করে কোন মেয়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এই ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। অনেক সময় মোবাইলে এভাবে কথা বলে ছেলে মেয়ে পরস্পরের সাথে সামনাসামনি দেখা করে। এ ধরনের প্রেমের সফলতার হার খুবই কম। আসলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফলতা এ ধরনের প্রেমের মূল উদ্দেশ্য নয়।

১০. ইন্টারনেটে প্রেম: ইন্টারনেটে চ্যাটিংয়ে বা সোসিয়্যাল মিডিয়া সাইটে (যেমন - ফেইসবুক, মাইস্পেস) দু'জনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে এ ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। অনেক ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ের একজন বিদেশে অবস্থান করে। এভাবে পরিচয়ের পর ছেলে মেয়ে পরস্পরের সাথে সামনাসামনি দেখা করে। এ ধরনের প্রেমে উভয়পক্ষেরই ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকে অনেক। অনেক সময়ই কোন ছেলে মেয়ে সেজে অন্য কোন ছেলের সাথে এমন সম্পর্ক চালিয়ে যায়। আর তাই অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের সম্পর্ক প্রতারণায় পরিণত হয়। পূর্বে এ ধরনের প্রেমের সাফল্যের হার বেশি থাকলেও বর্তমান সময়ে এসে সাফল্যের হার কম।

১১. ত্রিভূজ প্রেম: এ ধরনের প্রেমকে বলা যেতে পারে একজন মেয়েকে নিয়ে দু'জন ছেলের টাগ-অফ-ওয়ার বা দড়ি টানাটানি। একই মেয়ের প্রতি দু'জন ছেলের ভালোবাসা এই প্রেমের মূলকথা। উক্ত মেয়েকে পেতে দু'জন ছেলেই মরিয়া থাকে। ত্রিভূজ প্রেমের ক্ষেত্রে প্রায়শঃই মেয়েরা মানসিক দ্বন্দে ভোগে - কাকে পছন্দ করবে এই নিয়ে। অনেক সময়ই ছেলে দু'জনের মধ্যে প্রতিযোগিতা রূপ নেয় মারামরিতে। দু'জন মেয়ে আর একজন ছেলের মধ্যেও ত্রিভূজ প্রেম লক্ষিত হয়। তবে সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা মারামারিতে নয় বরং রূপ নেয় চুলোচুলিতে।

১২. বহুভূজ প্রেম/Multi প্রেম: একই মেয়ে বা ছেলের প্রতি ২ এর অধিক ব্যাক্তির অনুরাগই মূলতঃ বহুভূজ প্রেম। এক্ষেত্রে উক্ত মেয়ে বা ছেলেটি স্বভাবতই দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্য্যের অধিকারী হয়ে থাকেন। সবাই তার সাথে প্রেম করতে চায় এই বিষয়টি তাকে ব্যাপক আনন্দ দেয়।

১৩. অসমবয়সী প্রেম: এ ধরনের প্রেমের বৈশিষ্ট্য প্রেমিক ও প্রেমিকার মধ্যে বয়সের উল্লেখযোগ্য ব্যবধান। যদিও মেয়ের চাইতে ছেলে কয়েক বছর বড় হলেও তা স্বাভাবিক প্রেম হিসেবে ধরা হয়, তথাপি, যদি পার্থক্য খুব বেশি হয় - যেমন ১২ বছর তবে তা অসমবয়সী প্রেম হিসেবে ধরা হয়। মজার ব্যাপার হলো ছেলের চাইতে মেয়ে এক বছরের বড় হলেও তা অসমবয়সী প্রেম হয়ে হিসেবে ধরা হয়। অসমবয়সী প্রেমকে এ সমাজে বাঁকা চোখে দেখা হয়, বিশেষত যদি মেয়ে ছেলের চাইতে বয়সে বড় হয়। অসমবয়সী প্রেম বিয়েতে রূপ নিলে দাম্পত্য জীবন শান্তিপূর্ণ হয় না বলে একটি মতবাদ এদেষে প্রচলিত আছে, কিন্তু এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।

১৪. শারীরিক প্রেম/শরীর সর্বস্ব প্রেম: প্রেমিক ও প্রেমিকার মধ্যে শরীরি আকর্ষণই এই প্রেমের মূল উপাদান। আবেগ ততোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

১৫. দুধের মাছি প্রেম/অর্থসর্বস্ব প্রেম: "যতোদিন টাকা আছে, ততোদিন সম্পর্ক" - অনেকটা এই নীতির বলে এই ধরনের প্রেম গড়ে ওঠে। অবশ্যই ছেলেরাই টাকা ব্যয় করে থাকে এসব ক্ষেত্রে। ধনীর ঘরের ছেলেদের পক্ষে এই ধরনের সম্পর্ক বেশিদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়। তবে মোটামুটি আয়ের ছেলেরা খরচের ঠেলায় অল্পদিনেই হাঁপিয়ে ওঠে, সম্পর্কও আর বেশিদিন থাকেনা। তখন ঐসব মেয়েরা অন্য ছেলের খোঁজে বেরোয়।

১৬. ঈর্ষাণ্বিত প্রেম: "অমুক ছেলে প্রেম করে, আমাকেও করতে হবে" বা "অমুকের বয়ফ্রেন্ড আছে,আমারো চাই" - অনেকটা এমনতর মানসিকতা থেকে এসব প্রেমের সূত্রপাত। এ ধরনের প্রেমগুলো অনেক সময়ই সাময়িক হয়ে থাকে। অধিকাংশ সময়ই বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড মনের মতো না হলেও প্রয়োজনের তাগিদে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া হয়।

১৭. জেদের বশে প্রেম: পূর্ববর্তী বা বর্তমান বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডকে অনেকটা দেখিয়ে দেয়ার ("তুমি ছাড়াও আমার প্রেম করার লোকের অভাব নেই.......") উদ্দেশ্যে যাকে সামনে পাওয়া যাবে ধরে তার সাথে প্রেম করাই এ ধরনের প্রেমের মূল লক্ষ্য। মনের মতো লোক পাওয়ার বিষয়টি এখানে নগণ্য।

১৮. চড়িয়ে খাওয়া প্রেম/গাধাখাটুনি প্রেম/ঘানি টানা প্রেম: প্রেমিক বা প্রেমিকার কাছ থেকে কোন বিশেষ সুবিধা লাভই এ ধরনের প্রেমের উদ্দেশ্য। ক্লাসের ভালো রেজাল্ট করা মেধাবী ছাত্রটি এ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় শিকার হিসেবে পরিগণিত হয়। মেয়েদের মধ্যে এ ধরনের প্রেমের প্রচলণ বেশি দেখা গেলেও ছেলেদেরকেও মাঝে মাঝে করতে দেখা যায়।

১৯. অব্যক্ত প্রেম/না বলা প্রেম: নীরবে এক অপরকে ভালোবেসে গেলেও পরিস্থিতি, সময় বা মনোবলের অভাবে প্রেমিক বা প্রেমিকার মধ্যে কেউই একে অপরকে কোনোদিন বলেনি। অব্যক্ত প্রেম হারানোর বেদনা খুব কষ্টদায়ক, জীবনের অন্যতম বড় ভুল হিসেবে মনে থাকে।

২০. সুপ্ত প্রেম: একে অপরকে ভালোবাসে কিন্তু কেউই কাউকে বলছে না, পুরো ব্যাপারটাই লুকিয়ে যাচ্ছে এমন প্রেমই সুপ্ত প্রেম। সুপ্ত প্রেম আজীবন সুপ্ত থেকে গেলে তা পরিণত হয় অব্যক্ত প্রেমে।

২১. চুক্তিবদ্ধ প্রেম: এ ধরনের প্রেম হয় পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে। সাধারণ অর্থে প্রেম বলতে যা বোঝায় তা এই ধরনের প্রেমে অনুপস্থিত থাকে। কোন ভবিষ্যৎ থাকেনা এসব সম্পর্কের। মূল উদ্দেশ্য হলো কোন বিশেষ গোষ্ঠীকে নিজেদের মধ্যে প্রেম দেখিয়ে কোন বিশেষ স্বার্থ চরিতার্থকরণ। শোবিজ ও মিডিয়ার তারকাদের মধ্যে এ ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়।

২২. মিথ্যে প্রেম/অভিনয় প্রেম: এ ধরনের প্রেমে প্রেমিক বা প্রেমিকার দু'জনের যেকোন একজন প্রেমের অভিনয় করে যায়। যখন প্রেমিক বা প্রেমিকার কেউ একজন ভবিষ্যতের কথা ভাবতে আরম্ভ করে তখন এই প্রেমের সমাপ্তি ঘটে। এ ধরনের প্রেমের পরিণতিও যেকোন একজনের জন্য খুবই কষ্টদায়ক।

২৩. ২য় ইনিংস প্রেম/Old is Gold প্রেম/Revived প্রেম: পূর্ববর্তী বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডের সাথে পুনরায় জুড়ে গিয়ে এই প্রেম করা হয়।

২৪. ব্ল্যাকমেইল প্রেম/অনিচ্ছাপূর্বক প্রেম/জোড় খাটানো প্রেম: এটাকেও প্রেম বললে পাপ হবে। জোড়পূর্বক এসব প্রেম করা হয়ে থাকে। এর শিকার হয়ে থাকে মেয়েরাই। পাড়ার বখাটে ছেলে বা বড় ভাই, কলেজের বখাটে ছাত্র, কর্মক্ষেত্রে উপরস্থ কর্মকর্তা বা বস প্রধানত এরাই এ ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী হন।

২৫. গায়ে পড়ে প্রেম/নাছোড়বান্দা প্রেম: মেয়ে কোন সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী নয় তবুও ছেলে জোড় চেষ্টা চালিয়ে যায় এমন প্রেমে। অনেক সময়ই এমন পরিস্থিতিতে মেয়েরা সরাসরি না বলতে পারে না যার মাশুল তাদেরকে পরে দিতে হয়।

২৬. বিদেশী প্রেম/পরবাসী প্রেম: এ ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ের মধ্যে অন্ততঃ একজন বিদেশী হয়।

২৭. অসাম্প্রদায়িক প্রেম: এ ধরনের প্রেমের ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে দু'জনে দুই ধর্ম বা সম্প্রদায়ের অনুসারী হয়ে থাকে। সমাজ এ ধরনের সম্পর্ককে সমর্থন করেনা। বিশেষতঃ হিন্দু-মুসলমান ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রেম বেশি বিতর্কের সৃষ্টি করে।

২৮. চাঞ্চল্যকর প্রেম/আলোচিত প্রেম: এ ধরনের প্রেমে প্রেমিক ও প্রেমিকা যাই করেন না কন তা মিডিয়ায় চাঞ্চল্যকর তথ্য হিসেবে প্রচার করা হয়। সাধারণত শো-বিজ আর মিডিয়ার তারকা ও সেলিব্রেটিরা এ ধরনের প্রেম করে থাকেন।

২৯. ঐতিহাসিক প্রেম: এইসব প্রেমের কাহিনীর অবসান ঘটেছে অনেক আগেই কিন্তু আজো রয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়। এখনো এসব প্রেমকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়।

৩০. ভাড়াটে প্রেম/ভ্রাম্যমাণ প্রেম/Roaming প্রেম: এ ধরনের প্রেমের প্রেমিক বা প্রেমিকারা বলতে গেলে ভাড়া খাটে। তারা সকালে একজনের গার্লফ্রেন্ড তো বিকেলে আরেকজনের। কোন নির্দিষ্ট ঠিক ঠিকানা নেই। ব্যাপারটা অনেকটা মাসে মাসে মোবাইল হ্যান্ডসেট চেন্ঞ্জ করার মতো।

৩১. প্রেমময় প্রেম: এই প্রেমে প্রেমিক আর প্রেমিকা দু'জনেই একজন আরেকজনের দিকে প্রেমময় ভঙ্গিতে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকেন, হাত ধরে বসে থাকেন কোন রেস্টুরেন্টের অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশে, সারাক্ষণ I Love You বলে আর শুনেও ক্লান্তি আসে না তাদের। সারাদিন প্রেমের পর মোবাইলে ১২টার পরও কম জান না তারা।

৩২. ঝগড়াটে প্রেম: সারাক্ষণ দু'জনের মধ্যে খিটির-পিটির লেগে থাকাটা এই প্রেমের বৈশিষ্ট্য। কিছুক্ষণ হয়তো দু'জনে শান্ত থাকে, তারপর আবার কিছু না কিছু একটা নিয়ে একজন শুরু হয়ে যায়। এ ধরনের প্রেমে ঝগড়াগুলো ক্ষণস্থায়ী হয়, কিন্তু খুব ঘনঘন হয়। ঝগড়াগুলো অধিকাংশই হয় ফোনে। বন্ধুকূল সর্বদা দু'জনের ঝগড়া মিটাতে ব্যস্ত থাকে। মেয়ে তার সখীদের কাছে এই ঘনঘন ঝগড়ার কথা বলে বেড়ায়।

৩৩. সমলিঙ্গীয় প্রেম: আমাদের দেশে এখনো খুব একটা প্রচলিত না হলেও বাইরের অনেক দেশেই এই ধরনের প্রেমের প্রচলণ আছে। দু'জন ছেলের মধ্যে হলে তাদেরকে Gay বলে আর দু'জন মেয়ের মধ্যে হলে Lesbian।

৩৪. অমিল প্রেম/দুনিয়াছাড়া প্রেম: এই প্রেমে প্রেমিক ও প্রেমিকার মধ্যে কথাবার্তা, মত, পছন্দ, অপছন্দ কোন দিক দিয়েই কোন মিল থাকেনা, তারপরও কিভাবে যেন সম্পর্ক টিকে থাকে।

৩৫. 'আজো তোমায় ভালোবাসি' প্রেম: এই প্রেমে প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ ঘটেছে আগেই। তবুও আজো তারা একে অপরকে ভালোবাসেন। নীরবে চেয়ে যান সেই মানুষটির সঙ্গ যার সাথে একসঙ্গে জীবন কাটাতে পরিস্থিতিই ছিলো একমাত্র ও সবচেয়ে বড় বাধা।

৩৬. ব্যর্থ প্রেম: এবং সবশেষে আছে ব্যর্থ প্রেম। এ প্রেম শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যায়। ব্যর্থ প্রেমিকার চাইতে ব্যর্থ প্রেমিকের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। ব্যর্থ প্রেমের শেষটা হয় প্রস্তাব প্রত্যাখান দিয়ে। কখনো কখনো ছেলেদের ভাগ্যে জোটে থাপ্পড়, মেয়েদের জুতার বাড়ি আর কখনো কখনো গণধোলাই। অনেক সময়ই ব্যর্থ প্রেমের পরিণতি হয় করুন। কেউ দেবদাস হয়ে যায়, কেউবা মেয়েদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে ও "দুনিয়ার সব মেয়ে এক" এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। দুর্বল মানসিকতার কেউ কেউ আত্মহননের পথও বেছে নেয়।

* প্রেম খুবই পরিবর্তনশীল ও ব্যাক্তিভেদে এর সংজ্ঞা ভিন্ন। আর আমার দেয়া প্রকারভেদগুলোর সাথে কারো কারো দ্বিমত থাকাটা স্বাভাবিক। আমি দাবী করছি না এখানে সব ধরনের প্রেমের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু অনেক ধরনের কথা বলা হয়েছে এটা সত্য। প্রকারভেদগুলো আলোচনার সময় যতোটা সম্ভব নিরপেক্ষতা অবলম্বনের চেষ্টা করা হয়েছে। কারো কারো কাছে এই প্রচেষ্টা ধৃষ্টতা মনে হলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।